শিশুদের হৃদরোগ – এই কথা শুনলে মনে হয়, এ তো বড়দের সমস্যা! কিন্তু সত্যি কথা হলো, জন্মের সময় থেকেই শিশুরা এর ঝুঁকিতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৩ লক্ষ শিশু জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। বাংলাদেশে এর হার আরও উদ্বেগজনক – প্রতি ১০০০ জন্মের মধ্যে ১৮.৯ জন শিশু জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের চেয়ে কিছুটা বেশি (৫৫.২% মেয়ে)। অনেক ক্ষেত্রে এই রোগগুলো নীরবে এগিয়ে যায়, যা ‘কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ’ (CHD) নামে পরিচিত। কিন্তু ভালো খবর হলো, প্রথম দিকে ধরা পড়লে চিকিত্সা দিয়ে শিশুরা সুস্থ জীবন যাপন করতে পারে। এ
শিশুদের হৃদরোগের প্রধান কারণ: জন্মগত থেকে জীবনধারা পর্যন্ত
শিশুদের হৃদরোগ মূলত দুই ধরনের – জন্মগত (কনজেনিটাল) এবং অর্জিত। জন্মগত হৃদরোগ হয় মাতৃগর্ভে ভ্রূণের বিকাশের সময় হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক গঠনের কারণে। এর মধ্যে রয়েছে হার্টের ছিদ্র (যেমন ভেনট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট), ভাল্ভের ত্রুটি বা রক্তনালীর সমস্যা। বাংলাদেশে এর হার বেড়েছে অপুষ্টি, অকাল জন্ম এবং মায়ের স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে। চিকিত্সকদের মতে, মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে শিশুর হৃদরোগের ঝুঁকি ৩-৪ গুণ বাড়ে। গর্ভাবস্থায় রুবেলা সংক্রমণ বা ভাইরাল ইনফেকশন হলে হার্টের ছিদ্রের সম্ভাবনা বাড়ে। স্বল্প ওজন বা ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া শিশুরাও ঝুঁকিতে।
অন্যদিকে, অর্জিত হৃদরোগ শিশু-কিশোরদের মধ্যে দেখা যায় অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কলেস্টেরল এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে। ধূমপানের ধোঁয়ায় এক্সপোজার বা ফাস্ট ফুডের অভ্যাস এদের ঝুঁকি বাড়ায়। বাংলাদেশের শহুরে পরিবারে এর হার বাড়ছে, কারণ শিশুরা কম খেলাধুলা করে এবং জাঙ্ক ফুড খায়।
শিশুদের হৃদরোগের লক্ষণ প্রায়ই নীরব, কিন্তু সতর্ক থাকলে ধরা যায়। জন্মের পরপরই লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
কিশোরদের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি দেখা যায়। নারী শিশুদের মধ্যে লক্ষণ আরও অস্পষ্ট হতে পারে। যদি এমন লক্ষণ দেখেন, তাহলে অবিলম্বে পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্টের কাছে যান।
হৃদরোগ প্রতিরোধ সম্ভব! গর্ভাবস্থায় মায়েরা রুবেলা টিকা নিন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন এবং সুষম খাবার খান। জন্মের পর নবজাতক পরীক্ষায় ইসিজি বা ইকোকার্ডিওগ্রাম করান। শিশুদের জন্য:
জন্মগত হৃদরোগের জন্য অস্ত্রোপচার (যেমন ছিদ্র বন্ধ করা) বা ক্যাথেটারাইজেশন কার্যকর। হালকা ক্ষেত্রে ওষুধই যথেষ্ট। বাংলাদেশে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক হার্ট সার্জারি উপলব্ধ। প্রথম ১-২ বছরের মধ্যে চিকিত্সা নিলে ৯০% শিশু সুস্থ হয়।
শিশুদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো আমাদের হাতে। গর্ভকাল থেকে সচেতনতা বাড়ান, নিয়মিত চেকআপ করুন। আপনার শিশুর হৃদয়কে সুস্থ রাখুন – ভবিষ্যতের জন্য। সুস্থ থাকুন!